শনিবার, 07 জুলাই 2012 03:52

সামান্য বাতাস দিলেই বিদ্যূৎ নাই কমলগঞ্জ ও কুলাউড়ায় পল্লী বিদ্যুতের ৩৩ হাজার গ্রাহকের চরম ভোগান্তি

Rate this item
(0 votes)

বিডি সংবাদ ২৪ ডটকম on 23/04/2012

এম.এ.হামিদ, মৌলভীবাজার : একটু ধমকা বাতাস দিলেও মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ও কুলাউড়া উপজেলায় মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যূৎ সমিতি(পবিস)-র বিদ্যূৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। পাহাড়ি এলাকার সঞ্চালিত বিদ্যূৎ লাইন পর্যবেক্ষণ করে পূনরায় বিদ্যূৎ সরবরাহ করতে সময় লেগে যায় ৮ থেকে ১০ ঘন্টা,কখনো কখনো ২/৩ দিন। বিদ্যূৎ অফিসে ফোন করেও গ্রাহকরা কোন তথ্য জানতে পারেন না। বিদ্যূৎ বিপর্যয়ের ফলে পবিস কমলগঞ্জ জোনালের ৩৩ হাজার বিদ্যূৎ গ্রাহক পড়েন চরম ভোগান্তিতে।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল বিদ্যূৎ গ্রীড লাইন থেকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের পাহাড়ি এলাকার ভিতর দিয়ে কমলগঞ্জ ও কুলাউড়া উপজেলায় প্রবাহিত হয় বিদ্যূৎ সঞ্চালন লাইন। পাহাড়ি এলাকার ভিতর দিয়ে বিদ্যূৎ সঞ্চালন লাইন থাকায় একটু ধমকা বাতাস বইতে শুরু করলেই পবিস জোনাল কমলগঞ্জের বিদ্যূৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেন। ধমকা বাতাস থেমে গেলেও লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভিতরের পাহাড়ি এলাকা পর্যবেক্ষণ করে কমলগঞ্জে পূনরায় বিদ্যূৎ সরবরাহ চালু হতে সময় লেগে যায় কম পক্ষে ৮ থেকে ১০ ঘন্টা। আবার ঝড় হলে বিদ্যূৎ লাইন পর্যবেক্ষণ করে সংস্কার শেষে ১৫/১৬ ঘন্টা পর বিদ্যূৎ সরবরাহ হয়। বিদ্যূৎ বন্ধ হয়ে যাওয়া ও কখন বিদ্যূৎ সরবরাহ চালু হবে তা জানার জন্য বিদ্যূৎ গ্রাহকরা কমলগঞ্জে পবিস-এর সবগুলো অভিযোগ কেন্দ্রে ফোন করলে বিদ্যূৎ কর্মীদের ফোন বন্ধ পান। এমতাবস্থায় বিদ্যূৎ গ্রাহকরা অসহায়ের মত অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারেন না। কুলাউড়া উপজেলার গ্রাহকদের ভোন্তির অবস্থা আরও সূচনীয়।
বিদ্যূৎ বিপর্যয়ে কমলগঞ্জ ও কুলাউড়া উপজেলার শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, ব্যবসায়ীসহ কোন অফিসের কাজ সঠিকভাবে করা যায় না। শমশেরনগর বাজারের ফটোষ্টেট ও ইন্টারনেট ব্যবসায়ী সৈয়দ জাহাঙ্গীর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তাদের ব্যবসা বিদ্যূৎ নির্ভর। গত দুই সপ্তাহ ধরে কমলগঞ্জে অস্বাভাবিক বিদ্যূৎ সরবরাহের কারণে তাদের ব্যবসায়ে প্রভাব পড়েছে। রবির বাজারের ফটোষ্ট্যাট ও স্টুডিও ব্যবসায়ী মুহিত আহমদ বলেন বিদ্যুতের কথা বলে লাভ নেই,আমরা পল্লী বিদ্যুতের কর্মচারীদের কাছে জিম্মি,ফোন করলে ফোন বন্ধ আবার খুলা থাকলেও ফোন উঠান না। এভাবে বিদ্যূৎ নির্ভর অন্যান্য  ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। তাছাড়া বিদ্যূৎ সমস্যার কারণে সংবাদকর্মীরাও সঠিকভাবে সংবাদ প্রেরণ করতে পারছেন না। টানা কয়েক ঘন্টা বিদ্যূৎ সরবরাহ বন্ধ থাকার পর যখন বিদ্যূৎ সরবরাহ চালু হয় তখনও আবার এক থেকে দেড় ঘন্টার লোড শেডিং-এ পড়ে গ্রাহকরা ভোগান্তির শিকার হন। পবিস কমলগঞ্জ জোনাল অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ৮ এপ্রিল রোববার সকাল থেকে ২০ এপ্রিল শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত প্রতি রাতেই কমলগঞ্জের উপর দিয়ে ঝড়, বৃষ্টি ও ধমকা বাতাস বয়ে যায়। ফলে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এলাকায় গাছ ভেঙ্গে পড়ে বৈদ্যূতিক খুটি ভেঙ্গে বৈদ্যূতিক তার ছেড়াসহ যন্ত্রাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঝড়ের পর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গিয়ে বিদ্যূৎ কর্মীরা মেরামত কাজ করে পূনরায় বিদ্যূৎ সরবরাহ করতে বেশ সময় লেগে যায়।
বিদ্যূৎ সমস্যার কথা স্বীকার করে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রকাশ কান্তি চৌধুরী বলেন, পাহাড়ি এলাকার ভিতর দিয়ে ৩৩ হাজার কেভি প্রধান বিদ্যূৎ লাইন থাকায় এসব সমস্যা হচ্ছে। পবিস কমলগঞ্জ জোনাল ডিজিএম প্রকৌশলী মোবারক হোসেন বিদ্যূৎ সমস্যার কথা নিশ্চিত করে বলেন, পাহাড়ি এলাকা পরিহার করে নতুন করে পাহাড়ের বাহিরের সমতল এলাকা দিয়ে ৩৩ হাজার কেভি বিদ্যূৎ লাইন স্থাপনের চেষ্টা করা হয়। তবে পিডিবির অসহযোগিতার কারণে আজ পর্যন্ত এ কাজ করা যাচ্ছে না। ফলে কিভাবে যে কমলগঞ্জে বিদ্যূৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা যাবে তা সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, পাহাড়ে সমস্যা হলে সকল বিদ্যূৎকর্মী সেসব স্থানে সংস্কার কাজে যান। তখনই নেটওয়ার্কের সমস্যার ফলে কোন গ্রাহক ফোনে কথা বলতে পারছেন না। মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালনকারী পবিস কমলগঞ্জ জোনালের জুনিয়র প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ও জুনিয়র প্রকৌশলী নাসির হোসেন বলেন, ঝড়, বৃষ্টির আর ধমকা বাতাসের ফলে পাহাড়ি এলাকায় গাছ পড়ে বিদ্যূৎ লাইনের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়। ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি এলাকায় নানা প্রতিকুলতার মাঝে বিদ্যূৎকর্মীরা দিবারাত কাজ করে কমলগঞ্জে বিদ্যূৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে। অভিযোগ কেন্দ্রগুলোতে আরও জনবল বাড়িয়ে পল্লী বিদ্যুতের সেবার মান জোরদার করা প্রয়োজন বলে সচেতন মহল মনে করেন। বিভিন্ন এলাকায় পল্লী বিদ্যুতের উপর ক্ষেপে গোপনে বৈঠক করে আন্দোলনের প্রস্তুতি চলছে বলে খবর পাওয়া গেছে। পল্লী বিদ্যুতের সেবার মান এবং প্রায় নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুতের ব্যবস্থা না করতে পারলে যে কোন মূহুর্তে বড় ধরনের ঘটনা ঘটে যেতে পারে বলে কমলগঞ্জ ও কুলাউড়া উপজেলার জনগণের সাথে কথা বলে জানা গেছে।

Source: http://bdsangbad24.com/?p=866

Read 24638 times Last modified on শনিবার, 07 জুলাই 2012 22:50